1. mohiturrahman335@gmail.com : mohiturrahman335@gmail.com :
       
শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:১২ অপরাহ্ন

হিমাচলে বিরল ‘জোড়িদারা’ প্রথা মেনে এক নারীকে বিয়ে করলেন ২ ভাই

  • Update Time : সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫

ভারতের হিমাচল প্রদেশের সিমৌর জেলার শিল্লাই গ্রামের এক বিয়ের অনুষ্ঠান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ভিডিওতে সেখানকার হাট্টি জনগোষ্ঠীর দুই ভাই এক নারীকে বিয়ে করেছেন। কয়েকশ মানুষ এই বিয়ের সাক্ষী হন, যা ঐতিহ্যবাহী ‘জোড়িদারা’ প্রথা অনুযায়ী হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।

বধূ সুনীতা চৌহান এবং বর প্রদীপ ও কপিল নেগি জানান, তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পারস্পরিক সম্মতিতে এবং কোনও প্রকার চাপ ছাড়াই। তিন দিনব্যাপী বিয়ের এই আয়োজন শুরু হয় ১২ জুলাই। এতে লোকগান ও নৃত্যে উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়ে।

প্রদীপ বলেন, আমরা এই প্রথাকে সম্মান করি। গোপনে নয়, প্রকাশ্যেই বিয়ে করেছি কারণ আমরা গর্বিত।

বিদেশে কর্মরত তার ছোট ভাই কপিল জানান, এই বিয়ের মাধ্যমে আমরা স্ত্রীর জন্য ভালোবাসা, স্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি।

কুনহাট গ্রামের বাসিন্দা সুনীতা বলেন, আমি জানতাম এই প্রথার কথা এবং স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা যেই বন্ধন গড়েছি, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

হিমাচলের রাজস্ব আইনে স্বীকৃত এই প্রথাকে ‘জোড়িদারা’ বলা হয়। সিমৌরের ট্রান্স-গিরি অঞ্চলের বাদহানা গ্রামে গত ছয় বছরে এমন পাঁচটি বিয়ের নজির পাওয়া গেছে।

হাট্টি জনগোষ্ঠী একটি সঙ্কুচিত উপজাতি গোষ্ঠী। যাদেরকে তিন বছর আগে তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। একসময়ে বহুল প্রচলিত এই বহুপতিত্ব (এক নারীর একসঙ্গে একাধিক স্বামী গ্রহণ) প্রথা এখন লোপ পাওয়ার পথে। শিক্ষার প্রসার (বিশেষ করে নারীদের মধ্যে) এবং আর্থিক উন্নয়নের কারণে এই বিয়ের সংখ্যা কমছে বলে জানান স্থানীয় প্রবীণরা।

তবে এখনও কিছু গ্রামে গোপনে এমন বিয়ের আয়োজন হচ্ছে এবং সমাজ তা মেনে নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রথার মূল উদ্দেশ্য ছিল পৈতৃক জমি বিভক্ত না হওয়া নিশ্চিত করা। এখনও উপজাতীয় নারীদের জমির অধিকার নিয়ে প্রশ্ন আছে।

হাট্টি সমাজের কেন্দ্রীয় সংগঠন কেন্দ্রীয় হাট্টি সমিতির সাধারণ সম্পাদক কুন্দন সিং শাস্ত্রী বলেন, হাজার হাজার বছর আগে এই প্রথা চালু হয়েছিল কৃষিজমি সংরক্ষণের জন্য। একাধিক ভাইয়ের এক স্ত্রী থাকলে পারিবারিক ঐক্য ও সহযোগিতা বজায় থাকে। এমনকি পৃথক মায়ের সন্তানদেরও একই স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ হয়।

তিনি বলেন, বৃহত্তর পরিবার থাকলে পাহাড়ি এলাকায় নিরাপত্তা এবং কৃষি কার্যক্রম চালানো সহজ হয়। বিভিন্ন দিক থেকে এই প্রথা উপজাতীয়দের টিকে থাকার কৌশল ছিল।

এই বিশেষ প্রথায় ‘জজদা’ নামে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বধূ শোভাযাত্রায় বরপক্ষের গ্রামে এসে পৌঁছান। এরপর বরের বাড়িতে ‘সীনজ’ নামের আচার সম্পন্ন হয়। পুরোহিত স্থানীয় ভাষায় মন্ত্র পড়েন, পবিত্র জল ছিটিয়ে দেন বর-কনেকে এবং শেষে গুঁড় খাইয়ে ‘কুলদেবতার আশীর্বাদে’ মধুর দাম্পত্যজীবনের কামনা করা হয়।

যদিও প্রথাটি বহু পুরনো, কিন্তু এখনকার সামাজিক কাঠামো ও নারীর অধিকার বিষয়ে পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে এই বিয়েকে ঘিরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে হাট্টি সমাজ বলছে, এটা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য এবং তারা একে সম্মানের চোখে দেখে।

শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

আরো খবর দেখুন