বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত ভালুকা উপজেলা আজ দেশের অন্যতম শিল্প ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত। এটি কেবল একটি প্রশাসনিক অঞ্চল নয়, বরং বাংলাদেশের প্রথম মডেল থানা ও দেশের শিল্প উন্নয়নের প্রতীক।

অবস্থান ও পরিচিতি
রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভালুকাকে বলা হয় “ময়মনসিংহের দরজা”। চার লেনের ঢাকা–ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক ধরে অল্প সময়েই পৌঁছানো যায় এই শিল্পনগরীতে। উত্তরে ত্রিশাল, দক্ষিণে শ্রীপুর, পূর্বে গফরগাঁও এবং পশ্চিমে ফুলবাড়ীয়া ও টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল এই জনপদ ঘিরেই ভালুকার অবস্থান।
শিল্প ও অর্থনীতি
ভালুকা বাংলাদেশের অন্যতম বিসিক শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত। এখানে শতাধিক গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, সিরামিক, ঔষধ, কোমল পানীয়, গ্লাস ও মোটরযান কারখানা স্থাপিত হয়েছে।
এই সব শিল্প কারখানা দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দক্ষিণ ভালুকার আন্তর্জাতিক মানের পোশাক শিল্পাঞ্চল, যা বাংলাদেশকে বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যে আরও শক্ত অবস্থানে রেখেছে।
কুমির খামার ও রপ্তানি
ভালুকার হাতিবেড় গ্রামে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কুমির প্রজনন খামার “রেপটাইলস ফার্ম”, যা দেশের রপ্তানি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এখান থেকে কুমিরের চামড়া, দাঁত ও হাড় বিদেশে রপ্তানি করে কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।
মৎস্য ও কৃষি
ভালুকা ময়মনসিংহ জেলার মাছ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এখানকার উদ্যোক্তারা বাণিজ্যিকভাবে রুই, কাতলা, পাঙাশ, তেলাপিয়া, কই, মাগুর, শিং ইত্যাদি মাছ চাষ করে দেশের চাহিদা মেটাচ্ছেন এবং বিদেশেও রপ্তানি করছেন।
এছাড়া ভালুকার কৃষি জমিতে এখন আধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা চাষাবাদের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ফলের বাগান, ফুলের খামার ও আধুনিক ফিশ ফিড উৎপাদন এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
সারসংক্ষেপ
ভালুকা আজ বাংলাদেশের শিল্প, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও আধুনিকতার প্রতীক। এটি এমন এক উপজেলা, যেখানে ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও শিল্প — সবকিছু মিলেমিশে এক অনন্য সুষমা সৃষ্টি করেছে। দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভালুকার অবদান নিঃসন্দেহে অনন্য ও গৌরবের।