ভালুকা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ, যার নামের পেছনে রয়েছে একাধিক আকর্ষণীয় জনশ্রুতি ও ইতিহাসের ছোঁয়া। মূলত ভালুকা গ্রাম ও ভালুকা বাজারকে কেন্দ্র করেই পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ভালুকা থানা (১৯১৭ সালে) এবং পরবর্তীতে ভালুকা উপজেলা।
ভালুকা নামের উৎপত্তি নিয়ে প্রচলিত বেশ কয়েকটি গল্পের মধ্যে তিনটি জনশ্রুতি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও আলোচিত।

জনশ্রুতি ১: ভল্লুক থেকে ভালুকা
ব্রিটিশ শাসনামলে নীলকর সাহেবগণ নীলচাষের জন্য এ অঞ্চলে নীলকুঠি স্থাপন করেন। মাঝে মাঝে তাঁরা শিকার অভিযানে বের হতেন এবং আশেপাশের বন-জঙ্গলে বাঘ ও ভাল্লুক দেখতে পেতেন। ফলে এলাকা তাঁদের কাছে “ভল্লুকের এলাকা” নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। সময়ের পরিক্রমায় “ভল্লুক” শব্দটি রূপান্তরিত হয়ে আজকের “ভালুকা” নামটি লাভ করে।
জনশ্রুতি ২: ভাওয়াল রাজা ও বাজারের কাহিনি
বর্তমান ভালুকা বাজারের দুটি অংশ—পূর্ব ও পশ্চিম।
- পূর্ববাজার ছিল ভাওয়াল পরগণার অন্তর্ভুক্ত।
- পশ্চিমবাজার ছিল মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজ শশীকান্তের জমিদারির অধীনে।
জঙ্গলের ভেতরে ছিল এক পবিত্র মাজার, যার খাদেম ছিলেন বুচাই ফকির—ওয়াহেদ আলী ফকির ও তৈয়বজান বিবির পিতা।
মরহুম খান সাহেব আবদুল্লাহ চৌধুরীর উদ্যোগে মনসুর আলী খান, জয়েদ আলী ও জয়েদ খানের সহায়তায় গড়ে ওঠে ভালুকা বাজার।
পূর্ব বাজারে ভাওয়াল রাজার নামে ছিল একটি কাঁচারী ঘর, যেখানে খাজনা আদায় করা হতো। সেই “ভাওয়ালের কাঁচারী” থেকেই ধীরে ধীরে এলাকার নাম হয়ে ওঠে ভালুকা।
জনশ্রুতি ৩: ভালুক চাঁদ মণ্ডলের উত্তরাধিকার
আরেকটি জনপ্রিয় জনশ্রুতি মতে, ভালুক চাঁদ মণ্ডল ছিলেন আদিবাসী কোচ বংশের একজন প্রভাবশালী সর্দার। তাঁর নামানুসারেই এই এলাকার নামকরণ হয় “ভালুকা”।
আজও উথুরা ইউনিয়ন ও বর্তমান ডাকাতিয়া অঞ্চলে কোচ বংশের উত্তরসূরিদের বসবাস রয়েছে। বর্তমানে তাঁরা “বর্মণ” পদবী ধারণ করে পরিচিত।
ঐতিহ্যের ধারায় ভালুকা
ইতিহাস, লোককথা ও জনশ্রুতির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা ভালুকা আজ এক সমৃদ্ধশালী উপজেলা—যেখানে অতীতের ঐতিহ্য আর আধুনিক উন্নয়ন একসঙ্গে মিশে আছে।
ভালুকার নাম শুধু একটি স্থানের পরিচয় নয়, এটি একটি ইতিহাসের, সংস্কৃতির এবং মানুষের স্মৃতির প্রতীক।