যারা প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিজেকে হারাতে চান, যাদের পছন্দের জায়গা বন বা উদ্যান তাদের জন্য ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নে অবস্থিত কাদিগড় জাতীয় উদ্যান হতে পারে এক দুর্দান্ত গন্তব্য। দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ও যত্নে গড়ে ওঠা এই উদ্যানটি ভালুকা উপজেলার প্রায় ২১% ভূমি জুড়ে বিস্তৃত। প্রকৃতি প্রেমী, ভ্রমণপিপাসু কিংবা ফটোগ্রাফার সবার জন্যই কাদিগড় জাতীয় উদ্যান এক অনন্য অভিজ্ঞতার প্রতিশ্রুতি দেয়।
অবস্থান ও যাতায়াত
ঢাকা থেকে মাত্র ২ ঘণ্টার পথ বসেই যাওয়া যায় বাস বা মাইক্রোবাসে। ভালুকার সিডস্টোর বাজার থেকে সোজা কাচিনা, তারপর মাত্র ১ কিলোমিটার উত্তরে পালগাঁও চৌরাস্তার পাশে কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার। ময়মনসিংহ সদর থেকেও দূরত্ব মাত্র এক ঘণ্টা।
উদ্যানের কাঠামো ও সুবিধাদি
উদ্যানটিকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে কাদিগড় বিট ও উথুরা বিট নামে। এখানে রয়েছে:
- ১টি প্রধান প্রবেশপথ
- ১টি অফিস ভবন
- ২টি ইকো কটেজ
- ১টি বিশ্রামাগার
- ২টি গোলাঘর
- ১টি ওয়াচ টাওয়ার
- ২টি সেন্ট্রি পোস্ট
- ১টি পিকনিক স্পট
- ১টি প্রাকৃতিক লেক
- ৭০০ মিটার পাকা রাস্তা
- ১,০০০ মিটার ব্রিক-সলিং রাস্তা
প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য
মধুপুর গড়ের অংশ হিসেবেই বিবেচিত এই বনাঞ্চলের মাটি লালচে, যা চুন, লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ। স্থানীয়রা একে বলেন ‘মাইটাল মাটি’, আর ভূ তত্ত্ববিদদের কাছে এটি পরিচিত মধুপুর ক্লে নামে।
এখানে রাজত্ব করছে শাল ও গজারি গাছ, সাথে রয়েছে মেহগনি, বেত, গুল্মজাতীয় গাছপালা এবং নানা রকমের ঔষধি গাছ। বনজ সম্পদ যেমন বুনো আলু ও কাঁঠালের বাগান এখানকার মানুষের জীবিকার উৎস।
জীবজন্তুর আধার
এই বনে আপনি দেখতে পারেন:
- বিপন্ন প্রজাতির হনুমান
- বিলুপ্তির পথে থাকা দেশীয় পাখি শুমচা
- ময়ূর, বনমোরগ, বুনো শুকর, বানর
- অসংখ্য অচেনা পাখি ও প্রাণী
বনের মাঝে ছোট ছোট উঁচু নিচু মালভূমির মতো জায়গাগুলো যেন তৈরি করে পাহাড়ি পরিবেশের এক ছোঁয়া। ভাওয়াল বা মধুপুর গড়ের যে স্বাদ, ঠিক সেই একই অনুভূতি মিলবে এখানে।
পর্যটন ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ
উদ্যানটি এখনও অনেকের কাছে অজানা। অথচ সরকার এখানে থেকে প্রতিবছর প্রায় অর্ধ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। তবে পর্যাপ্ত রক্ষীবাহিনীর অভাবে মাঝে মাঝে অবৈধ কাঠ কাটার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যা এই প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের জন্য হুমকি।
ভ্রমণ টিপস
- খাবারের ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে, তাই নিজেদের খাবার নিজেই নিয়ে আসা উত্তম।
- ভ্রমণের খরচ অনেকটাই কম, রিসোর্ট বা বড় পিকনিক স্পটের তুলনায় বেশ সাশ্রয়ী।
- প্রকৃতি সচেতন হয়ে ভ্রমণ করুন বনের পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কিছু করবেন না।
কাদিগড় জাতীয় উদ্যান এখনো মূলধারার পর্যটন মানচিত্রে উঠে আসেনি, কিন্তু যারা প্রকৃতির আসল সৌন্দর্য দেখতে চান, বনভূমির ঘ্রাণ নিতে চান তাদের জন্য এটি হতে পারে এক চমৎকার গন্তব্য। শহরের কোলাহল থেকে একটুখানি মুক্তি আর শান্তির খোঁজে ঘুরে আসতে পারেন এই বনে, যেখানে প্রকৃতি নিজেই গল্প বলে, পাখিরা গান গায়।